অবশেষে এক বিশেষ সম্মাননায় ভূষিত হলেন যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বিশ্ব ফুটবল সংস্থার (ফিফা) নতুন একটি পুরস্কার, যা হচ্ছে ‘ফিফা পিস প্রাইজ’, এর প্রথম প্রাপক হিসেবে তিনি নির্বাচিত হয়েছেন। শুক্রবার ওয়াশিংটনে ২০২৬ বিশ্বকাপের ড্র অনুষ্ঠান চলাকালীন সময়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে, ফিফা সভাপতির দায়িত্বে থাকা জিয়ান্নি ইনফান্তিনো নিজে তার হাতে এই পুরস্কারটি তুলে দেন।
জন এফ. কেনেডি সেন্টারে প্রবেশের সময় কালো লাল গালিচায় পদচারণায় সেখানে উপস্থিত হয় একের পর এক ফুটবল তারকারা। তবে এর অন্যতম দৃষ্টি কোনওভাবে দাঁড় করিয়েছিল আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দিকে। ফিফা সভাপতি ইনফান্তিনোকে সঙ্গে নিয়ে লাল গালিচা দিয়ে তিনি অতিথির আসন গ্রহণ করেন। এরপর উচ্ছ্বসিত ভাষণে ইনফান্তিনো অতিথিদের শুভেচ্ছা জানান এবং এর পরে ট্রাম্পের হাতে ‘ফিফা শান্তি পুরস্কার’ তুলে দেওয়া হয়।
পুরস্কার জেতার সময় নিজের গলায় পদক ঝুলিয়ে, ট্রাম্প এক স্বাভাবিক সাহসিকতার সঙ্গে এই পুরস্কার গ্রহণ করেন। পাশে থেকে ইনফান্তিনো পুরস্কার ও স্বাগত ভাষণের অংশের পড়া শোনান।
পুরস্কার গ্রহণের পর ট্রাম্প বলেন, পৃথিবী এখন অনেক বেশি নিরাপদ। এটি সত্যিই আমার জীবনের অন্যতম বড় সম্মান। আমি মনে করি আমরা লাখ লাখ জীবন রক্ষা করেছি, যেমন কঙ্গো, যেখানে যুদ্ধসহ নানা সমস্যার সমাধান সম্ভব হয়েছে। ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের সংঘাতও যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগেই বন্ধ করা সম্ভব হয়েছে এই শান্তি প্রয়াসের মাধ্যমে। ইনফান্তিনো ও তার দল এক অসাধারণ কাজ করে চলেছেন। টিকিট বিক্রিতে তারা রেকর্ড গড়েছেন, যা ফুটবল প্রেমীদের জন্য একটি গর্বের বিষয়।
গত মাসে ফিফা এই পুরস্কারের ঘোষণা দেয়, যেখানে বলা হয়—বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় ‘অসাধারণ ও ব্যতিক্রমী ভূমিকা’ পালন করেছেন যারা তাদের এই পুরস্কার দেওয়া হবে। এর মধ্যে ট্রাম্পের নামও শোনা যায় মনোনীত হিসেবে। যদিও, নোবেল শান্তি পুরস্কার এই বছর ট্রাম্পকে দেওয়া হয়নি, তবুও তিনি দাবি করেন যে তিনি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংঘাতের সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।
গত কয়েক মাসে ট্রাম্পের সঙ্গে ফিফা সভাপতি ইনফান্তিনোকে অন্তত ছয়বার একসঙ্গে দেখা গেছে। রুয়ান্ডা ও কঙ্গোতে শান্তি চুক্তির অনুষ্ঠানে প্রথম সারিতে ছিলেন ট্রাম্প। এর আগে ক্লাব বিশ্বকাপের ফাইনালেও এই দুই কর্তার উপস্থিতি দেখা যায়। এমনকি ট্রফি উদযাপনের সময় মঞ্চে উঠে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ট্রফি গ্রহণ করেন ট্রাম্প। তিনি দাবি করেন, ফিফা তাকে আসল ট্রফি উপহার দিয়েছে, এবং এর পরবর্তী ম্যাচের জন্য নতুন ট্রফি বানানো হয়েছিল।
অগস্ট মাসে হোয়াইট হাউসে ২০২৬ বিশ্বকাপের ড্র ভেন্যু ঘোষণা করেন ট্রাম্প। সেখানে তিনি বলেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও যদি চান, তিনি উপস্থিত থাকবেন এই মহাযজ্ঞে—যদিও এখনো রাশিয়া নিষিদ্ধ থাকলেও। এছাড়া, সম্প্রতি গাজা যুদ্ধবিরতি বিষয়ক অনুষ্ঠানে ইনফান্তিনো বলেন, ট্রাম্প বিশ্ব শান্তির পথে দেয়াল ভেঙে সেতু নির্মাণ করেছেন।
নভেম্বরে আবারো ইনফান্তিনো তাঁর সঙ্গে দেখা করেন, যা ছিল ২০২৬ বিশ্বকাপের দর্শকদের জন্য দ্রুত ভিসা প্রক্রিয়া শুরু করার আনুষ্ঠানিকতা।
২০২৬ সালের ১১ জুন শুরু হবে এই বিশাল কান্ট্রি কাপে, যা ১৬টি শহরে অনুষ্ঠিত হবে। ফাইনাল হবে ১৯ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রে। এটি এখন तक কালের সবচেয়ে বৃহৎ বিশ্বকাপ হতে যাচ্ছে, যেখানে অংশ নিচ্ছে রেকর্ড সংখ্যক ৪৮টি দল।
ইনফান্তিনো তার প্রশংসা প্রকাশ করে বলেন, ট্রাম্প ওয়ার্ল্ড কাপ আয়োজনের ক্ষেত্রে অসাধারণ সহায়তা করেছেন। তার শক্তি, উদ্যম এবং প্রতিশ্রুতি এ উপলক্ষে সত্যিই প্রশংসনীয়। ফুটবল বিশ্বের অনেক তারকাও ট্রাম্পের প্রশংসা করেছেন। কয়েক সপ্তাহ আগে, সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্সের সম্মানে হোয়াইট হাউসের ভোজে অংশ নেওয়া ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো বলেন, তিনি এমন একজন, যিনি বিশ্বকে বদলে দিতে পারেন।
Leave a Reply